গল্প :- বাধ্য মেয়ে

লিখেছেন লিখেছেন জিহর ০১ জুন, ২০১৭, ১১:১৫:৪১ সকাল

১.

আসিফ, এই ভর-সন্ধায়  বৃষ্টি ভিজে তোমাকে কে বলেছে বের হতে ...?

 কথাগুলো বলে হাবিব সার আমার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকালেন..! যেন তার বড়োসড়ো কোন ক্ষতি করে ফেলেছি..! আমি সরি বলে পার পাব না জানি..! কারন সার অনেক আগেই বলেছেন যে, তিনি ইংরেজদের দেওয়া এই শব্দটি মোটেই পছন্দ করেন না..!

 এমনকি কোন কৈফিয়ত ও অচল এখানে....! যা দশ বছর আগে থেকে দেখে আসছি..! আমার চুপ থাকাটা সারকে আরো রাগিয়ে দিয়েছে..! বললেন,  ভেতরে আসতেও কি বলতে হবে,নাকি বাহিরে দাড়িয়ে আরো ভেজার ইচ্ছে আছে..! আমি বিনা বাক্যে সারের অনুসরণ করে তাদের ছোট্ট ড্রয়িং রুমটায় প্রবেশ করলাম..!

সার আরিফা'কে ডেকে তোয়ালে দিতে বললেন..! 

আরিফা আমার মামাতো বোন..! সার হলেন আমার বড়ো মামা..! আমি মামার কাছে হাই-স্কুল থেকে কলেজ পর্যন্ত  অবৈতনিক  প্রাইভেট পড়েছি..! তিনি একটি বে-সরকারি স্কুলে ইংরেজি শিক্ষক ।  তখন থেকেই তাকে সার ডাকি । এটা মামারও আদেশ । অবশ্য আমার ব্যাক্তিগতো ভাবে তাকে মামা ডাকতে ইচ্ছে হয়নি । সাধারনতো মামারা এতো কড়া হয় না । তারা হবে নরম, যেমন  ছোট মামা,  সে যেন আমার বন্ধুদেরই একজন । ছোট মামা আছেন নানু বাড়িতে । মাঝে মাঝে বেড়াতে যেতাম সেখানে ।  কিন্তু এখন আর সে সময় হয় না ।  আমি এম-বিএ করে এখন ঢাকায় একটা কম্পানিতে আছি । বাড়িতে আসাই হয় না, আর বেড়ানো ।

বড়ো মামি গতো হয়েছেন আরিফাকে ৪ বছরের রেখে..! মামা দ্বিতীয় বিয়ে করেননি মেয়েটার জন্যই । অবশ্য আরিফা আমাদের বাসায়ই বড়ো হয়েছে । ফলে আম্মা কয়েকদিন পর পর  ওকে না দেখলে তার ভালো লাগে না..! তাই ওকে ডাকতে বলেছিলেন ।

২.

বাসা থেকে বেরিয়েছিলাম বিকেলে। একটু বন্ধুদের আড্ডায় গিয়ে দেরি করে ফেললাম । সেখান থেকে বেরুতেই প্রচণ্ড বৃষ্টি ।  আরিফা আমাকে তোয়ালে দিয়ে সোফার পাশে দাড়ালো । সার বললেন, আজ আর আরিফা'কে বেরুতে দেবেন না । বৃষ্টিতে ওর শরির খারাপ করে । কোচিং  যেতে অসুবিধে হবে ।

  আমি  ওর দিকে তাকিয়ে একটু পরখ করতে চাইলাম । কলেজ পার করেও  বাবার সেই বাধ্য মেয়েটি হয়েই আছে, ভদ্রতার কারোনে পায়ের দিকে তাকানো । যদিও আম্মুর মোবাইল থেকে আমাকে অযথা বিরক্ত করা ওর প্রাত্যহিক,   সরি সাপ্তাহিক কাজ..!

  আমি কিছুই বললাম না । সারের হুকুম শিরোধার্য ।

বৃষ্টি থামার অপেক্ষায় ছিলাম ।  আমাকে চা দেবার কথা বলে,  সার  ছাতা নিয়ে মাগরিব নামাজের জন্য মসজিদে গেলেন  । দশ মিনিটের মাথায়  আরিফা চা নিয়ে এলো মগে করে । ও জানে যে, আমি কাপে চা খেতে অপছন্দ করি  । আসলে ও আমার বিষয়ে অনেক কিছুই জানে ।

 নিজের কাপে চুমুক দিতে দিতে বললো, চা কেমন হয়েছে ?

 বললাম:- তুই বল । 

:- ভালো 

:- তাই নাকি

:-হুম

বললাম :- হাহ হা, ভালো হয়নি , আরেকটু চিনি লাগবে ।

 বললো:- এতো চিনি খাওয়া সাস্থের জন্য  ক্ষতিকর ।

আমি :- খুব সাস্থ সচেতন মনে হয় ?

আরিফা:- বলতে পারো..! কিছুটাতো অবশ্যই !

আমি নতুন প্রসংগে যেতে চাচ্ছিলাম,

তাই বললাম :-  তোর ভর্তি কোচিং কেমন চলছে ?

:- ভালোই...

:- মেডিকেল না করে হঠাৎ ঢাকা ভার্সিটির কোচিং শুরু করলি...?

:- তুমিই তো ভালো জানো ...!

:- আচ্ছা বাদ দে ...! আমি উঠবো ..!

:- বাবা আসা  পর্যন্ত থাকো না প্লিজ...!

ঠিক এমন সময় সার মসজিদ থেকে চলে এলেন  । অগ্যতা   আমি বাসার পথ ধরলাম..! বৃষ্টি এখন থেমেছে । কিন্তু আরিফা আমার যাবার পথের দিকে তাকিয়ে থাকবে..! যতক্ষণ দেখা যায়..! আমি পিছু ফিরে তাকাবো না...! পাছে আবার ওর চোখের মায়ায় আটকে যাই..! 

আমি মনে মনে কিছু কথা আউড়াতে লাগলাম :- সময় তো আমার সব তোমার জন্যই বাধা, অল্প কিছুদিনের অপেক্ষায় কি আর হবে এমন..!

কিন্তু কথা গুলো আমি আরিফা'কে বলতে পারি না । সে তার বাবার বাধ্য মেয়ে ।

হ্যা, সার, মানে বড়ো মামা, এবং আম্মুর সিদ্ধান্ত যে, আরিফা ঢাকাতে আমার  বাসায় বউ হয়ে উঠবে ।

(সমাপ্ত)

 লিখা:- তালুকদার জহির

বিষয়: বিবিধ

১০৭২ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

383196
০১ জুন ২০১৭ দুপুর ০২:৪৪
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : সুন্দর, সংক্ষিপ্ত ও সুখপাঠ্য।
383208
০১ জুন ২০১৭ রাত ০৮:৩৫
মনসুর আহামেদ লিখেছেন :
ভালো লাগলো , অনেক ধন্যবাদ
383366
১৮ জুন ২০১৭ রাত ০১:৪৯
জিহর লিখেছেন : ওহিদ এবং মনসুর ভাইকে কৃতজ্ঞতা সমেত ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File